Thursday, January 13, 2011

পাটের জিনোম বদলে দেবে বাংলাদেশকে

পাটের জিনোম বদলে দেবে বাংলাদেশকে- ড. জন ক্রিস ডিটার, জিনোম সায়েন্স গ্রুপ লিডার
এক নজরে

ড. ডিটার
গ্রুপ লিডার
জেনোমিকস গ্রুপ (এলএএনএল)
কেন্দ্রীয় পরিচালক
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ এনার্জি, জয়েন্ট জিনোম ইন্সস্টিটিউট
পরিচালনা পর্ষদ সদস্য
দ্য অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যাবরেটরি অটোমেশন
সদস্য
আমেরিকান সোসাইটি ফর মাইক্রোবায়োলজি, আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য এডভান্সমেন্ট অফ সায়েন্স
চেয়ারম্যান
সিকোয়েন্সিং, ফিনিশিং এন্ড অ্যানালাইসিস ইন দ্য ফিউচার (এসএফএএফ) শীর্ষক আন্তর্জাতিক বার্ষিক সভা

প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে গত ২৫ জুন মাত্র একদিনের জন্য বাংলাদেশে আসেন জিনোম সায়েন্স ও লস আলামোস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির জেনোমিকস (এলএএনএল)-এর গ্রুপ লিডার ড. জন ক্রিস ডিটার। সেদিন তিনি সিলেটের শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সেমিনারে বক্তব্য রাখেন। শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের পাটের জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কার নিয়ে সন্ধানীকে জানিয়েছেন তাঁর অভিমত

প্রথমেই জানতে চাইব জিন নকশা উন্মোচনের দরকারটা কী?
জিন নকশা উন্মোচনকে বলা যায় 'ঋরহফরহম ঃযব নঁরষফরহম নষড়পশ ড়ভ ষরভব'। কোনো জীবের জিনোম বলতে ওই জীবের বংশানুক্রমিক তথ্যের সমষ্টিকে বোঝায়, যা তার ডিএনএতে সংকেত আকারে থাকে। জীবনের জন্য প্রয়োজন প্রোটিন। আর তা কী করে কখন-কোথায় বানাতে হবে তার নির্দেশনা থাকে ডিএনএতে। আর সেই বার্তা বহনকারী উপাদানটি হচ্ছে আরএনএ। জীবের প্রথম মাতৃকোষেই লেখা থাকে ডিএনএর বিন্যাস। কোনো জীবকে বুঝতে হলে ওই জীবের জিনের সেই বিন্যাস জানতে হবে।

সদ্য আবিষকৃত পাটের জিন বিন্যাস কিভাবে কাজে আসবে?
জানতে পেরেছি, পাটকে এখানে সবাই সোনালি আঁশ বলে। এই জিন নকশা উচ্চ ফলনশীল পাটের জাত তৈরিতে সাহায্য করবে। মোটা আঁশ, আকারে বড়, স্বল্প সময়ে ফসল আসবে_এমন পাটও আসতে পারে অচিরেই। এ ছাড়া আশা করি, পোকার আক্রমণ, বন্যা ও খরাসহিষ্ণু নতুন পাটের জাত তৈরিও সম্ভব হবে। পাট শুধু কৃষকের নয়, শিল্প-কারখানাসহ প্রায় সবারই কাজে আসে। তা ছাড়া পরিবেশবান্ধব জ্বালানি তৈরিতেও কাজে আসবে। তবে এই জিন নকশা উন্মোচন করে থেমে গেলে চলবে না। এই জিন নকশার ভিত্তিতে আরো গবেষণা করে তার প্রতিফলন মাঠে দেখাতে হবে। গবেষণা শুধু ল্যাবরেটরিতে আটকে থাকলে চলবে না। এ ব্যাপারে আমি বেশ আশাবাদী। বাংলাদেশি বিজ্ঞানীরা ভালো করবেনই। শুধু পাট নয়, অন্য ফসল নিয়েও তাঁরা কাজ করবেন এবং উন্নতি করবেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। পাটের জিনোম বদলে দেবে বাংলাদেশকে।

বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য এই উদ্ভাবন কতটা গৌরবের?
বাংলাদেশে তৃতীয় বিশ্বের দেশ হলেও জ্ঞান-বিজ্ঞানে মোটেও পিছিয়ে নেই। এ দেশের তরুণ বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। এ জন্য আমি তাঁদের সম্মান করি। এই কাজের জন্য আমার পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের জন্য শুভেচ্ছা রইল। বিশেষ করে ড. মাকসুদুল আলম, ড. হাসিনা খান, ডাটা সফট এবং সব বিজ্ঞানী, যাঁরা এই কাজের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন, সবাইকে শুভেচ্ছা। বিশ্বে জিন নকশা উন্মোচন করেছে হাতেগোনা কয়েকটি দেশ। বাংলাদেশ যে তাদের দলে নাম লেখাতে পেরেছে এটা খুবই আনন্দের বিষয়। ড. মাকসুদুল আলম কিন্তু আরো দুটি জিন নকশা উন্মোচনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে এই কাজে তরুণ বিজ্ঞানীদের অংশগ্রহণ ছিল অনেক বেশি। অভিজ্ঞ বিজ্ঞানীদের সঙ্গে ওই তরুণদের অংশগ্রহণের জন্যই, আমি মনে করি, এ কাজ এত দ্রুত সম্ভব হয়েছে। কেননা জিন নকশা উন্মোচন মোটেই সহজ নয়। এ পর্যন্ত মাত্র ১৬টি উদ্ভিদের সম্পূর্ণ জিন নকশা উন্মোচিত হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য এটি অবশ্যই গর্বের বিষয়।

বিশ্বে বাংলাদেশের তরুণ বিজ্ঞানীদের অবস্থান কেমন?
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তরুণ বিজ্ঞানীদের অনেক চাহিদা আছে। তাঁরা অত্যন্ত পরিশ্রমী। এ জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের তরুণ গবেষকদের খুবই পছন্দ করি। আর এই বিজ্ঞানীদের যেকোনো প্রয়োজনে আমি ব্যক্তিগতভাবে পাশে থাকব।

বাংলাদেশে এসে কেমন লাগল ?
খুব সুন্দর দেশ। বিশেষ করে এদেশের আতিথেয়তা আমাকে মুগ্ধ করেছে।

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন

আল নাঈম চৌধুরী
Source: Daily Kalerkantho

No comments:

Post a Comment