Monday, January 10, 2011

বর্ষসেরা দেশি আবিষ্কার

বর্ষসেরা দেশি আবিষ্কার

প্রতি বছরই ইউরোপ ও আমেরিকার বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীদের ভারিক্কি সব আবিষ্কার স্থান পায় টাইম ম্যাগাজিনের তালিকায়। কিন্তু ওই তালিকার চেয়েও আমাদের জন্য এখন বেশি জরুরি_পাটের জিন সিকোয়েন্স কাজে লাগিয়ে বড় কিছু করা, বিকল্প জ্বালানির সাশ্রয়ী উৎস খোঁজা। আর এ বছর দেশে এসব নিয়েই হয়েছে নিরলস গবেষণা, এসেছে চমকপ্রদ সব সাফল্য। চলতি বছরে বিজ্ঞানে আমাদের সেরা কয়েকটি অর্জন নিয়েই সন্ধানীর বিশেষ আয়োজন
পাটের জিন নকশা
এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা সোনালি আঁশ পাটের পূর্ণাঙ্গ জিন নকশা উন্মোচন করে সারা বিশ্বের বিজ্ঞান মহলে অভূতপূর্ব সাড়া জাগিয়েছেন।
গবেষণাটির নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণরসায়ন বিজ্ঞানের শিক্ষক ড. হাসিনা খান। তাঁদের নেতৃত্বে কাজ করছেন দেশের অত্যন্ত সম্ভাবনাময় কিছু তরুণ গবেষক। উপাত্ত ভাণ্ডার সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণে সহায়তা করেছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডাটা সফট। আর ছিল বাংলাদেশ সরকারের অকুণ্ঠ সমর্থন ও অব্যাহত সহযোগিতা। পাটের জিন নকশা উন্মোচন মৃতপ্রায় পাটশিল্পকে শুধু পুনরুজ্জীবনের সম্ভাবনাই দেখায়নি, পাশাপাশি বাংলাদেশে এ পর্যন্ত বিজ্ঞান গবেষণায় স্থাপন করেছে নতুন মাইলফলক। প্রয়োজনীয় সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা পেলে আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা যে সারা বিশ্বকে তাক লাগানোর মতো আবিষ্কার করতে পারেন তাই প্রমাণ করেছে ইতিহাস সৃষ্টিকারী এ জিন নকশা উন্মোচন। এটি উচ্চফলনশীল পাটের জাত তৈরিতে সহায়তা করবে। মোটা আঁশ, আকারে বড়, স্বল্প সময়ে ফসল আসবে এমন পাটও আসতে পারে অচিরেই। পোকার আক্রমণ, লবণাক্ততা, বন্যা ও খরাসহিষ্ণু নতুন পাটের জাতও তৈরি সম্ভব হবে। এ ছাড়া পরিবেশবান্ধব জ্বালানি তৈরিতেও কাজে লাগবে। বিশ্বে জিন নকশা করতে পেরেছে হাতেগোনা কয়েকটি দেশ। এ পর্যন্ত মাত্র ১৬টি উদ্ভিদের জিন নকশা উন্মোচিত হয়েছে।

জুটিন
প্রচলিত টিন ব্যয়বহুল, আমদানিনির্ভর এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। পরিবেশের কথা মাথায় রেখেই বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের একদল বিজ্ঞানি সোনালি আঁশ পাট ব্যবহার করে উদ্ভাবন করেছেন নতুন ধরনের টিন জুটন। এর প্রধান কাঁচামালই হচ্ছে পাট। গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন পরমাণু শক্তি কমিশনের বিজ্ঞানী ড. মোবারক হোসেন খান।
লবণাক্ত পানিতে ক্ষতি হবে না এই টিনের। নষ্ট হয়ে গেলে মাটিতে পুরোপুরি মিশে যাবে। স্থায়িত্ব এক শ বছরেরও বেশি। এতে কোনো ক্ষতিকর ধাতব পদার্থ ব্যবহার করা হয় না, তাই মরিচাও ধরবে না। ভেতরে চটের স্তর থাকায় এর মধ্যে দিয়ে তাপ পরিবাহিত হবে না। ফলে ঘর ঠাণ্ডা থাকবে। আর সাধারণ টিনের মতো এটি ধারালো নয়। ঘরের চাল, দেয়াল, টয়লেটের কমোড, চাক ও চেয়ার তৈরিতে এর ব্যবহার সফল হয়েছে।

পাট বাঁচাবে মাটির ঘর
ফ্রান্সে এমন সব নান্দনিক বাড়ি বানানো হচ্ছে যা দেখে আশ্চর্য হবেন যে কেউ। আর আমাদের দেশের গ্রামেগঞ্জে মাটির বাড়ি বহুল প্রচলিত। বাড়ি বানানোর সময় যদি মাটির সঙ্গে পাটের আঁশ মেশানো হয়, তবে বাড়িটি হবে অনেক দৃষ্টিনন্দন ও টেকসই। এ বছর জাপানের সাইতামা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুয়েটের যৌথ গবেষণায় পাওয়া গেছে এ তথ্য। পাটের আঁশগুলো যদি ২-৩ সেমি লম্বা টুকরা করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয় তাহলে শুকানোর সময় কোনো ফাটল তৈরি করবে না। পাটের তৈরি ‘প্রটেক্টিভ কোটিং’ ঘরকে সহজেই বৃষ্টি-বাদল-ঝড় থেকে রক্ষা করবে। এটি ঘরকে ভূমিকম্প প্রতিরোধে সহায়তা করবে। পাশাপাশি এভাবে তৈরি ঘর পরিবেশবান্ধব, খরচ অল্প এবং সহজেই তৈরি করা যায়।

পাট থেকে জুতার সোল
বর্তমানে জুতার সোলে শু গ্রেডেড পিভিসি ব্যবহার করা হয়। এর কাঁচামাল আমদানিনির্ভর এবং খরচও বেশি। এর বিকল্প হিসেবে এ বছর পাটের তৈরি বিশেষ কম্পোজিট পদার্থ থেকে জুতোর সোল তৈরি করেছেন বুয়েটের ছাত্র তৌসিফ আহমেদ ও ঈশান খান। তাদের গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের প্রফেসর ড. মাকসুদ হেলালী। পাটের তৈরি কম্পোজিট থেকে উদ্ভাবিত জুতার সোলের খরচ ২০ ভাগ কম। ২০ শতাংশ পাটের আঁশের আর ৮০ শতাংশ পিভিসি দিয়ে বুয়েটের ল্যাবে তৈরি কম্পোজিট থেকে এই নতুন ধরনের জুতার সোল আবিষ্কার করেন তাঁরা।

জলে ডুববে না যে নৌকা
ফরাসি গবেষক ইভ মার ও শিল্পপতি আবুল খায়ের লিটুর যৌথ উদ্যোগে ১০ বছর আগে সাভার পৌর এলাকায় কাতলাপুরের বংশী নদীর তীরে গড়ে ওঠে ‘তাড়াতাড়ি’ শিপইয়ার্ড। বেঙ্গল জুট ইন্ডাস্ট্রিজের সহায়তায় প্রতিষ্ঠানটি দেশীয় পাট ও ফাইবার গ্লাসের সমন্বয়ে এ বছরেই তৈরি করেছে বিশেষ এক নৌকা। চাইলেও যা ডোবানো সম্ভব নয়। এমনকি উল্টে গেলেও ডুববে না। এতে চড়ে পাড়ি দেওয়া যাবে উত্তাল সমুদ্র। সাধারণ কাঠের নৌকার চেয়ে এর স্থায়িত্ব অনেক বেশি। নৌকাটির নকশা করেছেন ফরাসি প্রকৌশলী মার্ক ভ্যান পেইটেগেম। পালতোলা নৌকাটিতে ইঞ্জিনও আছে। পাট দিয়ে তৈরি বলে এটি পরিবেশবান্ধব।

Source: http://gunikanon.wordpress.com

No comments:

Post a Comment